,

রামদিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহক হয়রানী-দুর্ব্যবহার

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: অনিয়ম-দুর্নীতি আর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া সাব জোনাল অফিসের আওতাধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা।

সেবার চেয়ে সংযোগ বিছিন্ন করে সর্বোচ্চ ডিসি/আরসি ফি আদায় দেখানো, বিল পরিশোধের পরও সংযোগ বিছিন্ন, নিয়ম বহিভূর্তভাবে পুনঃসংযোগ, অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সাথে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) ওমর আলীর চরম দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকের ২ মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। একবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে হয়রানির শেষ নেই। পুনঃসংযোগ পেতে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে গ্রাহককে। তবুও জমা টাকার রশিদ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অনেক গ্রাহকের।

এ ব্যাপারে ভূক্তভোগী গ্রাহকরা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ঘৃতকান্দি গ্রামের মিলন সরকার তার বকেয়া তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল গত ১৬.০১.২৩ তারিখে ব্যাংক এশিয়া, রামদিয়া বাজার আউটলেট শাখায় পরিশোধ করেন। ওইদিন দুপুরে রামদিয়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম ওমর আলীর নেতৃত্বে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন সংযোগ বিছিন্ন করতে ওই গ্রাহকের বাড়িতে যান। বাড়ির লোকজন পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিলের কপি দেখালে তা ছুঁড়ে ফেলে দেন এজিএম ওমর আলী। দুর্ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে চলে যান। পরের দিন ওই গ্রাহক অফিসে গিয়ে এজিএমের সাথে দেখা করলে তিনি বলেন- ‘এক মাস পরে বিদ্যুৎ পাবি’। কারণ জানতে চাইলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। এরপর অফিসের লাইনম্যান রুহুল আমি পুনঃসংযোগের কথা বলে তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই গ্রাহক লাইনম্যান রুহুল আমিনকে ১ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে আজও বিদ্যুৎ পাইনি। একই অভিযোগ করেছেন ফুকরা গ্রামের বিধবা নারী জোছনা বেগম।

ফুকরা গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট ভাইর ২ মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হওয়ায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন সংযোগ বিছিন্ন করতে আসে। আমি অনেক অনুরোধ করে তাদের কাছে একদিনের সময় চাই। তারা আমার কোন কথা না শুনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করতে গেলে আমি নিষেধ করি। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এজিএম ওমর আলীর নির্দেশে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সংযোগ বিছিন্ন করে চলে যান। আমি এজিএমর উদ্বাত্ত্যপূর্ণ আচরণের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর ফুকরা গ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক সাহিদুল মুন্সী, হিসাব নম্বর-২৬৪-৭৮৩০ ও মো. মন্টু মুন্সী, হিসাব নম্বর-২৬৪-২৯৫০ এ দুটি মিটারের তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল ১৫শ’ বকেয়া থাকায় গত ডিসেম্বর মাসে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়। এক ঘন্টা পর পুনরায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ওই গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে বকেয়া বিল ১৫শ’ ও দুই মিটারের পুনঃসংযোগ ফি ৩ হাজার মোট ৪৫০০ টাকা নিয়ে তাৎক্ষনিক সংযোগ লাগিয়ে দেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী অফিসে ডিসি/আরসি ফি ৬৯০ টাকা অফিসে জমা দিয়ে রশিদ গ্রহণ করতে হবে। এরপর জমা রশিদ দেখানোর পর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা গিয়ে পুনঃসংযোগ দিবেন। এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রামদিয়া সাব জোনাল অফিসে অনুসন্ধান করে ওই দুই গ্রাহকের সংযোগ বিছিন্ন, টাকা গ্রহণ ও জমার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

তারাইল ফুকরা আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দা ভ্যানচালক আখি মোল্যার মাত্র ৪০৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় গত এক সপ্তাহ আগে বিদ্যুৎ বিছিন্ন করে দেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। তিন দিন পর অফিসের লোকজন গিয়ে তার কাছ থেকে ১২০০ টাকা নিয়ে পুনঃসংযোগ দেন। তবে অফিসে টাকা জমার কোন তথ্য নেই। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে নানা অনিয়ম চললেও দেখার কেউ নেই।

এসব অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. ওমর আলীর কাছে বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে কেন বক্তব্য দেব। আমি আপনার কাছে বক্তব্য দিতে বাধ্য না। আরইবির চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ হয়েছে। তিনি আমার বক্তব্য নিবেন।’

গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড বরাবর দেয়া একটি অভিযোগের কপি পেয়েছি। জেনারেল ম্যানেজার স্যার দেশের বাইরে। তিনি দেশে এসে বিষয়টি দেখবেন।’
-লিয়াকত হোসেন লিংকন

এই বিভাগের আরও খবর